দীর্ঘ কয়েক মাস ধরে ঘরে বসে আছি আমরা। কারণ করোনার ভয়। হ্যাঁ, করোনা সত্যি মহামারী রোগ। অতিমাত্রায় ছোঁয়াচে। কিন্তু ঘরে বসে থেকে বেশি বেশি খেয়ে অনেকেরই পেটে জমে যাচ্ছে চর্বি, যা উদ্বেগজনক। তাই চর্বি কমানো একান্ত প্রয়োজন।
মোটা বলতে বুঝি, দেহে প্রয়োজনের অতিরিক্ত মেদ জমা হওয়া। এ ক্ষেত্রে খাবারের চর্বিই মূল কারণ। মূল খাদ্য, যেমন- শর্করা, আমিষ ও চর্বির মধ্য থেকে এ চর্বিই আমাদের দেহে প্রথম জমে এবং সবশেষে ভাঙে। কাজেই খাবারের ব্যাপারে আমাদের সতর্ক হওয়া প্রয়োজন, যাতে এসব খাদ্য থেকে আসা মোট ক্যালরির এক-তৃতীয়াংশের বেশি কোনো অবস্থায়ই চর্বি থেকে না আসে। চর্বি গ্রহণের ব্যাপারে, বিশেষ করে যারা মোটার সমস্যায় ভোগেন, তাদের সতর্ক থাকতে হবে। অনেকেই ভাবেন, মোটা হওয়ার কি কোনো চিকিৎসা আছে? উত্তর একটিই- আছে।
বাজারে এখন নতুন ওষুধ পাওয়া যাচ্ছে। তা orlistat উপাদানে তৈরি। এটি চর্বি পরিপাক ও শোষণে বাধা দেয় এবং শুধু পরিপাকতন্ত্রেই সক্রিয় থাকে। এটি মাংস নয়, বরং চর্বি কমিয়েই শরীরের ওজন কমায়। রক্তে উচ্চমাত্রার চর্বি ও উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি কমাতেও সাহায্য করে। এতে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ঝুঁকি নেই বললেই চলে। ওষুধটি খাওয়ার ফলে চর্বি জাতীয় পদার্থ ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পদার্থে পরিণত হতে না পারায় তা রক্তে শোষিত হতে পারে না। ফলে তা ক্ষুদ্রান্ত্রেই থেকে যায় এবং পরে মলের সঙ্গে শরীর থেকে বের হয়ে যায়।
যাদের ওজন স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি কিংবা অস্বাভাবিক ধরনের মোটা, রক্তে কোলেস্টেরলের পরিমাণ বেশি- তারা এ ওষুধ ব্যবহার করতে পারেন। তবে এ ধরনের ওষুধ নিজে নিজে ব্যবহার করবেন না। কারণ অতিরিক্ত ওজন হ্রাস বা বেশি- কোনোটি স্বাস্থ্যের জন্য কাম্য নয়। চিকিৎসকের পরামর্শে এ ধরনের ওষুধ ব্যবহার করা ভালো। মনে রাখতে হবে, এর পাশাপাশি দৈহিক শ্রম ও ব্যায়াম ওজন নিয়ন্ত্রণে আনতে সাহায্য করবে।
প্রতিদিন খাবারের সঙ্গে যে চর্বি খাচ্ছেন, এ ওষুধ এর এক-তৃতীয়াংশ হজমে বাধা দেয়। এ ছাড়া রক্তের মোট কোলেস্টেরল, এলডিএল কমায়।কোলেস্টেরল ছাড়াও রক্তের ট্রাইগ্লসারাইড, ডায়াটিক এ ওষুধের সাহায্যে কমে থাকে। এ ওষুধ ব্যবহার করতে হলে আপনি চিকিৎসককে নিয়ে একত্রে সিদ্ধান্ত নেবেন, ওজন কতটুকু কমাতে হবে। মনে রাখবেন, ৫ থেকে ১০ শতাংশ ওজন কমলেই অনেক রোগের ঝুঁকি কমে যায়। এ ওষুুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও যে নেই, তা নয়। ওষুধ খেলে পায়ুপথে অতিরিক্ত বায়ু নির্গমন হতে পারে। চর্বি জাতীয় মল ও তন্ত্রেও পরিচালন বৃদ্ধি ঘটতে পারে। মনে হয়তো প্রশ্ন আসবে, এ ওষুধ কত দ্রুত ওজন কমাতে সক্ষম।
এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, (যেখানে ১ হাজার লোকের ওপর পরীক্ষা চালানো হয়েছিল) ছয় থেকে আট মাস ওষুধ ব্যবহারে গড়ে ১০ শতাংশ ওজন কমেছে। ওষুধ কোম্পানি বিভিন্ন পরীক্ষা করে এটিকে খুবই কার্যকর ও নিরাপদ বলে জানিয়েছে। তারা প্রাথমিকভাবে ৭ হাজারের বেশি মানুষের ওপর এ ওষুধের প্রতিক্রিয়া এবং কার্যকারিতা পরীক্ষা শেষে এটিকে নিরাপদ ও কার্যকর এবং এক কথায় চমৎকার বলে জানিয়েছেন।
Leave a Reply